ক্ষতি নিরূপনে ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি, নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

উখিয়া-টেকনাফ সহ সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের যত্রতত্র বসতির কারণে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সহ সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে এ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহ কেউ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তৈরি করা প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ও ভিন্নমত পোষণ করতে না পারে। এ বিশেষজ্ঞ কমিটি আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি পরিসংখ্যান করে সুপারিশ ও করণীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবে।

শুক্রবার ১৮ অক্টোবর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে এ কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি কমিটির একজন সদস্য নিশ্চিত করেছেন।

আগে যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে, তা বন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নিরূপণ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ক্ষয়ক্ষতির ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কারণে গত দু’বছরে বন ও পরিবেশের সর্বমোট ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ২ শ’ ২০ কোটি । তারমধ্যে ৬ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি সম্পূর্ণ উজাড় হয়েছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরা জ্বালানি হিসাবে ছাই করে ফেলেছে ১ হাজার ৮ হাজার ৩৭ একর সংরক্ষিত বনভূমি। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৫ শ’ ৫৫ কোটি টাকা। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পদচারণা, রাস্তা নির্মাণে ও অন্যান্যভাবে ধ্বংস করা হয়েছে আরো প্রায় ৫ শ’ বনভূমি। ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮ শ’ ২৯ টাকার জীববৈচিত্র্য। ৫ শ’ ৯১ কোটি টাকার মূল্যবান বনজ দ্রব্য। যেসব ক্ষতি সর্বমোট টাকার মূল্যে ২ হাজার ৪ শ’ ২০ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের দিয়ে সরেজমিনে জরীপ ও পরিদর্শন করে এই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছিলো। জরীপ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উক্ত সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও একই কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি, আনোয়ার হোসেন এমপি, মোজাম্মেল হোসেন এমপি, নাজিম উদ্দিন এমপি, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন (প্রশাসন), পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ), কমিটির সচিব ও সরকারের উপসচিব এ.কে.এম.জি কিবরিয়া, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।

স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, রোহিঙ্গা বসতির ফলে জীববৈচিত্র্য, বন ও পরিবেশ ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়, যা নিরূপণে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। এই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে হবে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মোরিং (এসপিএম) প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনভূমিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিশেষজ্ঞ কমিটি জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করে। একই জেলায় প্রায় একই ভূ-প্রকৃতির অংশ হওয়ায় এসপিএম প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির নির্ধারিত ক্ষয়ক্ষতির অনুরূপ হারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে ধ্বংস হওয়া সাড়ে ছয় হাজার একর রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বনজদ্রব্যের ৪৫০ কোটি ও জীববৈচিত্র্যের এক হাজার ৪০৯ কোটি মিলে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে আরও পারফেক্ট ও সঠিক হিসাব নির্ধারণে মন্ত্রণালয় থেকে এই ১০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।